রহস্যময় সান্ডা: প্রকৃতির এক অবহেলিত সৈনিক

রহস্যময় সান্ডা

রহস্যময় সান্ডা বিষয়ে তথ্য

রহস্যময় সান্ডা বাংলাদেশের মাটি ও প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা এক প্রাণীর নাম। অনেকেই হয়তো ভয় পায়, কেউবা মনে করে বিষাক্ত; আবার কারো কাছে এটি রহস্যময় একটি জীব। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই প্রাণীটি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এক অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।

সান্ডা কী?

রহস্যময় সান্ডা স্থানীয়ভাবে পরিচিত হলেও বৈজ্ঞানিক জগতে এর নাম Varanus bengalensis, যা Bengal Monitor Lizard নামে খ্যাত। এটি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল, বনভূমি ও কখনো কখনো শহরতলির জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায়ও দেখা যায়। দীর্ঘদেহী, পেশিবহুল গড়ন এবং সরু, সাপের মতো জিহ্বা থাকায় অনেকেই একে ভয় পায় বা ভুলভাবে বিষাক্ত প্রাণী ভাবে। কিন্তু বাস্তবে সান্ডা একটি সম্পূর্ণ নিরীহ ও শান্ত স্বভাবের সরীসৃপ, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং পরিবেশের জন্য উপকারী। এটি মাটির গর্ত বা গাছের ফাঁকে বাস করে এবং মূলত একাকী জীবন যাপন করে। মানুষ থেকে দূরেই থাকতে পছন্দ করে। এককথায় এটি একটি নিঃশব্দ পরিবেশ রক্ষক।

রহস্যময় সান্ডার গঠন ও বৈশিষ্ট্য

দৈর্ঘ্য: প্রাপ্তবয়স্ক সান্ডা প্রায় ৩-৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

 

গায়ের রঙ: সাধারণত বাদামী বা ধূসর বর্ণের, যা পরিবেশের সাথে সহজে মিশে যেতে সাহায্য করে।

 

লেজ: শক্তিশালী ও সর্পিল আকৃতির লেজ আত্মরক্ষায় ব্যবহার করে।

 

জিহ্বা: সরু ও দ্বিখণ্ডিত, যা সাপের মতো।

 

খাদ্যাভ্যাস

সান্ডা মূখ্যত মাংসাশী প্রাণী। এটি ছোট প্রাণি। এটি ইঁদুর, ব্যাঙ, পোকামাকড়, পাখির ডিম এমনকি সাপ পর্যন্ত খেয়ে থাকে। এদের খাদ্যাভ্যাস মানুষের জন্য বিশেষকরে কৃষকের জন্য উপকারী, কারণ ইঁদুর বা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে কৃষিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা পালন করে।

 

আবাসস্থল ও আচরণ

সান্ডা গর্তে বা গাছের ফাঁকফোকরে বাস করে। এরা একা চলাফেরা করে এবং খুব একটা আক্রমণাত্মক নয়, যদি না বিপদে পড়ে। দিনে বেশি সক্রিয় থাকে, তবে গ্রীষ্মে বেশি দেখা যায়।

বিষধর নয় !

বাংলাদেশে এখনও অনেক মানুষ বিশ্বাস করে সান্ডা বিষধর প্রাণী যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এটি বিষাক্ত নয় এবং সাধারণত মানুষের উপর আক্রমণ করে না। তবে আত্মরক্ষার জন্য কামড় দিতে পারে।

কুসংস্কার ও লোকবিশ্বাস

বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে বিশ্বাস করা হয় সান্ডার তেল গাঁটে লাগালে ব্যথা সারে। সান্ডার দুধে রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা। এইসব ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, বরং এ কারণে সান্ডার উপর চলে আসছে নির্মম শিকার।

সান্ডা সংরক্ষণ জরুরি কেন?

বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে মনিটর লিজার্ডের বিভিন্ন প্রজাতি বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশেও সান্ডার সংখ্যা কমছে। নির্বিচারে শিকার, বনভূমি ধ্বংস, কুসংস্কারমূলক ব্যবহারের ফলে আমাদের পরিবেশ হারাচ্ছে এক গুরুত্বপূর্ণ কীটনাশক সৈনিক।

উপসংহার

সান্ডা আমাদের পরিবেশের জন্য উপকারী এক সহচর। এটি কোনো ভয়ংকর প্রাণী নয়, বরং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় নিঃশব্দে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের উচিত এই প্রাণীটিকে ভুল তথ্য ও কুসংস্কার থেকে রক্ষা করা এবং প্রকৃতিকে তার মতো করে বাঁচতে দেওয়া।

 

প্রশ্নোত্তর পর্ব: সান্ডা নিয়ে সাধারণ কৌতূহলের উত্তর

১. সান্ডা কি বিষাক্ত প্রাণী?

উত্তর: না, সান্ডা মোটেও বিষাক্ত নয়। অনেকেই ভুলবশত মনে করেন এটি সাপের মতো বিষধর, কিন্তু বাস্তবে সান্ডা মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ, যদি না তাকে বিরক্ত করা হয়।

২. সান্ডা সাধারণত কোথায় বাস করে?

উত্তর: সান্ডা সাধারণত গর্তে, গাছের ফাঁকে, বা পরিত্যক্ত কাঠের নিচে আশ্রয় নেয়। এটি প্রাকৃতিক পরিবেশে যেমন বন বা ঝোপঝাড়ে বেশি দেখা যায়, তবে গ্রাম্য এলাকাতেও দেখা মেলে।

৩. সান্ডা কী খায়?

উত্তর: সান্ডা মূলত মাংসাশী প্রাণী। এটি ছোট পোকামাকড়, ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখির ডিম এবং মাঝে মাঝে সাপও খেয়ে থাকে। ফলে এটি পরিবেশে কীটপতঙ্গ ও ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৪. সান্ডাকে মারলে কী হয়?

উত্তর: সান্ডা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একে না মেরে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। তাছাড়া বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সান্ডা শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

৫. সান্ডার তেল বা দুধ ব্যবহার করা কি বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক?

উত্তর: না, সান্ডার তেল বা দুধ ব্যবহারের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এগুলোর উপর ভিত্তি করে গড়া লোকবিশ্বাসগুলো কেবল কুসংস্কার, যা প্রাণীটির অপ্রয়োজনীয় শিকার ও নির্যাতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উৎস

 

For bdnews24 news browse our site and Stay with updated with the latest headlines, all newspapers link of home and abroad, breaking news, sports highlights, job advertisement, and trending news of the world. You can also find essential daily life style blog from our site. We collected news from trusted source. We published news in our site very first. It is your one-stop destination for comprehensive and reliable news. So connected with us through our website bdnewslink.

 

Disclaimer:

We gather news and information from various sources to provide informative blog posts. Some content here incorporates information shared through various media in order to ensure that the public receives information from accurate sources.. We do not claim ownership of any copyrighted materials unless explicitly stated. If you are a copyright owner and believe that any content on this site infringes your rights, please do not issue a copyright strike. Instead, kindly contact us directly through our admin or support page. We are committed to addressing and resolving such matters promptly and respectfully.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
Twitter
LinkedIn