সরকারি চাকরি পাওয়ার উপায়/প্রস্তুতি

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি

কেন সরকারি চাকরি?

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে কথা বললেই এটি মনে চলে আসে যে সরকারি চাকরি নাকি সোনার হরিণ। আসলেই কি তাই? মানুষ কেন সরকারি চাকরি করতে চায়, সরকারি চাকরিতে তো বেতন কম। এরকম নানা কথা প্রচলিত হলেও সত্য তারপরও মানুষ সরকারি চাকরি পেতে চায়। কেউ পায় কেউ বা পায় না। প্রথমত জব সিকুউরিটি প্রয়োজন। কারন আপনার চাকরির উপরই আপনার পরিবার নির্ভরশীল। সরকারি চাকরিতে পেনশন বলে একটা কথা আছে যা আপনার শেষ বয়সে অন্তত কারো কাছে মাথানত হতে দিবে না বা কারো কাছে হাতও পাততে হবে না। এরপরও ফ্যামিলি পেনশনের ব্যাপারটা তো আছেই। সরকারি চাকরি মানুষের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে। সবচেয়ে বড় বিষয় কাছ থেকে জনগনের সেবা করার একটা দারুন সুযোগ পাওয়া যায়।

সরকারি চাকরির ধরন

প্রতিষ্ঠান ভেদে সরকারি চাকরির সুযোগ সুবিধা ভিন্ন হয়। খাস সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কমিশন, সরকারি কোম্পানি ইত্যাদি ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে। আবার ক্যাডার ও নন-ক্যাডার দুই ধরনের সার্ভিস রয়েছে সরকারি চাকরিতে। সাধারনত বিসিএস কোয়ালিফাই করে যারা চাকরি পায়, তারা হচ্ছে ক্যাডার সার্ভিস বাকিগুলো হচ্ছে নন-ক্যাডার।

সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের পার্থক্য

যে সকল প্রতিষ্ঠানের সব কিছু সরকার পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, হস্তক্ষেপ করে সে গুলো হলো সরকারি। সরকারের অধীনেই পরিচালিত হয় অর্থাৎ সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারের প্রত্যক্ষ প্রভাব বিদ্যমান। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা পেনশন পাবেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সকল কাগজাদিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কথাটি লেখা থাকে এবং বাংলাদেশ সরকারে রাষ্ট্রীয় লোগো ব্যবহৃত হয়। অপরপক্ষে যেসকল প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকে নিজস্ব রুলস ও রেগুলেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে সেগুলো হচ্ছে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এরা পেনশন পেতেও পারে আবার নাও পারে। তবে তারা আনুতোষিক সুবিধা পাবে। তাদের নিজস্ব লোগো থাকে। সাধারনত একটি বোর্ড বা পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে এ সকল পতিষ্ঠান পরিচালিত হয়।

সরকারি চাকরি লাভের জন্য আপনার প্রস্তুতি

সরকারি চাকরি লাভের কতিপয় প্রস্ততি ও তা বাস্তবায়ন করা খুব জরুরি যদি আপনি তাড়াতাড়ি চাকরি পেতে চান। এখানে কিছু বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো।

মনোবল দৃঢ় রাখা

সর্বপ্রথম মনোবল দৃঢ় করে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে সরকারি চাকরি পেতে টাকা লাগে, মামা-খালুর তদ্‌বির লাগে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অযোগ্যদের কথা। বাস্তবে সরকারি চাকরি হয় মেধার বলে। ধরেন আপনি বার বার ভাইভা দিচ্ছেন কিন্তু চাকরি হচ্ছে না। তার কারন কি হতে পারে? ধরেন আপনি নিয়োগ পরীক্ষায় ১০০ তে ৬৫ পেয়েছেন এবং আপনার ঐ নিয়োগেই অনেকেই ৮০ বা তার উপরে নম্বর পেয়েছে। এখন আপনিই বলেন আপনি নিয়োগকারী হলে কাকে নিবেন? তাই মনোবল দৃঢ় রেখে সবোর্চ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ ব্যতিত সরকারি চাকরি লাভের দ্বিতীয় কোন উপায় নেই।

যোগ্যতা ও প্রস্তুতির স্বচ্ছতা

আমাদের অনেকের জীবনের লক্ষ্য থাকে একটা ভালো সরকারি চাকরি করার। তাই প্রথমেই আপনার যোগ্যতা এবং প্রস্তুতির সঠিকতা নিশ্চিত করুন। আপনি কোন ক্ষেত্রে আগ্রহী এবং কী প্রস্তুতি প্রয়োজন সেটি জানা গুরুত্বপূর্ণ। ধরন এবং প্রস্তুতি অনুযায়ী সরকারি চাকরি অর্জন করুন। সরকারি চাকরি পেতে আপনি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, নিউজপেপার, বা অন্যান্য উৎস থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করুন।

সরকারি চাকুরি পাওয়ার জন্য কিভাবে অধ্যয়ন করবেন?

সরকারি চাকরি অধিক প্রতিযোগিতামূলক একটি চাকরি। এখানে প্রতিটি পদের বিপরীতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিযোগিতা করে থাকে। সরকারি চাকরির জন্য নিজেকে উত্তমরুপে গড়ে তুলতে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নাই। আপনি যদি চাকরির জন্য নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে চাকুরি আপনাকেই খুজবে। যেসকল বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে সরকারি চাকরি দেওয়া তা আপনাকে ভালোভাবে আয়ত্ব করতে হবে।

সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রস্তুতি

সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের নির্দ্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নাই। চলমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারনত সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নগুলো বেশি করা হয়। তাই সাধারণ জ্ঞানের জন্য ভালো একটা বই সংগ্রহ করে তা নিয়মিত চর্চা করতে হবে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিব বিষয়গুলো ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। প্রতি মাসের সাম্প্রতিক তথ্যগুলো জানতে হবে। প্রতিদিন খবরের প্রধান প্রধান হেডলাইনগুলো সম্পর্কে ধারনা নিতে হবে।

বাংলা বিষয়ে প্রস্তুতি

যদিও আমরা বাঙালি তারপরও আমরা বাংলায় ভালো করতে পারি না। বাংলায় ভালো করতে হলে সাহিত্য ও ব্যাকরণ দু’টোই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা বাঙালী বলে বাংলার সব জানি এ ধরণের ভ্রান্ত ধারণা মনের মধ্যে না রেখে যথাযথ বাংলা চর্চা করে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলা সাহিত্যের রস বের করা শিখতে হবে। সাহিত্যকে নিজের মনের মধ্যে আপন করে নিতে পারলেই এর রস উপভোগ করতে পারবেন। বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের জীবনীসহ তাঁদের সাহিত্য কর্মকে অধিক যত্নসহকারে আত্ত্বস্থ করতে হবে। চাকরি পরীক্ষায় ব্যাকরণের কিছু কমন অধ্যায় থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে যেমন: সন্ধি বিচ্ছেদ, বিপরীত শব্দ, শুদ্ধ বানান, ভাষা, ধ্বনি ও বর্ণ, সমাস, শব্দ ও শব্দের উৎস, এককথায় প্রকাশ ও বাগধারা, কারক, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, সমার্থক শব্দ ইত্যাদি। এগুলো সর্বাধিত গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে।

গণিত বিষয়ে প্রস্তুতি

গণিত কোন মুখস্তের বিষয় না। এটি একটি বুঝার বিষয়। সাধারনত চাকরির পরীক্ষায় যে কয় ধরনের অঙ্ক আসে প্রথমেই তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। বেশিরভাগ সরকারি চাকরির জন্য গণিতের যে কয়টি টপিক্স রয়েছে যেমন:  পাটি গণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, মানুষিক দক্ষতা ইত্যাদির উপর প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। প্রতিটি নিয়মের কমপক্ষে দু’টি করে অঙ্ক আয়ত্ব করতে হবে। এগুলো শুধু এমসিকিউ এর জন্য শর্টকাট শিখলে হবে না। বিস্তারিত শিখার পর শর্টকাট টেকনিক জানতে হবে। তাহলে এমসিকিউ ও রিটেন উভয়েই ভালো করা যাবে।

ইংরেজী বিষয়ে প্রস্তুতি

জাতি হিসেবে যেহেতু আমরা বাঙালি তাই ইংরেজীতে আমাদের দক্ষতা কম থাকাটাই স্বাভাবিক। যেহেতু চাকরির পরীক্ষা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা তাই এখানে আমাদের অনেক বেশি শ্রম দিয়ে এই বিদেশি ভাষাটিকে আয়ত্ব করতে হবে। বাংলার মত এখানেও সাহিত্য ও গ্রামারের বিষয়ে অধিক মনোযোগী হয়ে চর্চা করতে হবে। গ্রামারের Parts of speech, Clauses, Composition, Sentence and transformation, Idioms and Phrases, Correction, Sentences, Synonym, Antonym, Analogy, Correct Spelling ইত্যাদি টপিক্সগুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করত হবে।

 

 

এ ছাড়াও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় ও টপিক্সে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুন। আশা করি চাকরি আপনাকে ছেড়ে যাবে না।

 

দেশ-বিদেশের সকল পত্রিকা ও টেলিভিশনের খবর এবং চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

 

সরকারি চাকরির বিভিন্ন বিধি-বিধান, পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন ও বিভিন্ন অর্ডার পেতে এই লিংকে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
Twitter
LinkedIn